বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো আস্তে আস্তে আমার সহ্যসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে মনে হয়। এমনিতে টিভি দেখি না। খবরও না। নেটে দুই-তিনটা পত্রিকা, বিডিনিউজ২৪ আর সামুতে চোখ রাখলে কোন খবরই মিস হবার কথা না। ঈদের অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে কিছু অ্যাড দেখে মেজাজ খারাপ হয়েছিল। টিভি দেখা পর্বের শেষের দিকে গতকাল “বিশ্বের প্রথম ২৪ ঘন্টা ডিজিটাল বাংলা স্যাটেলাইট চ্যানেল (!!!)” চ্যানেল আই এর “জন্মদিন” নামক ন্যাকামো দেখ সেটা পূর্ণ হল । তাই আপাতত টেকি বিষয় বাদ দিয়ে এই বিষয়ে একটু লিখছি। তার আগে নিজের একটা সন্দেহের কথা বলি। আচ্ছা, আপনাদের কি মনে হয়, চ্যানেল আর নির্মাতারা বেশী ন্যাকামো করছে নাকি আমি নিজেই অ্যাবনরমাল হয়ে যাচ্ছি? কাল দেশের বরেণ্য সন্মানীত অসংখ্য ব্যক্তির মুখে যে ভাবে চ্যানেল আইয়ের স্তুতি আর শুভেচ্ছার বাণী শুনলাম তাতে আমার মনে হচ্ছে আমি নিজেই অ্যাবনরমাল। সেটা ভাবাই বরং ভাল। স্তুতির কথা বাদ দিই, তাঁরা তাঁদের পছন্দের চ্যানেলের প্রশংসা করতেই পারেন। কিন্তু, তাঁরা যে “জন্মদিনের” শুভেচ্ছা জানতে গিয়ে স্বরচিত গান, কবিতা আর কথার প্রায় অপব্যবহার করলেন সেটা কি তাঁরা বোঝেন না? চ্যানেলের জন্মদিন! তাও আবার ৫০ বা ১০০তম না ১১ তম। সেটা নিয়ে ১০০ পাউন্ডের কেক কাটা, দেশের কয়েকশ শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবির অংশগ্রহণ, রাস্তা আটকে বিরাট রেলী!!! একটা স্যাটেলাইট চ্যানেলের ১১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এভাবে পালন কি আদিখ্যেতা না? অনেক দেশের চ্যানেলই দেখেছি। কোথাও তো কোনদিন দেখলাম না প্রতি বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়, ঘটা করে পালনের কথা বাদ দিলাম। চিন্তা করুন, পাশের দেশ ভারতে সব চ্যানেল যদি এভাবে প্রতিবছর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ঘটা করে পালন করতে যায় তাহলে ভারতের বুদ্ধিজীবি আর কবি,শিল্পী-সাহিত্যিকদের আর কোন কাজ করার সময় থাকবে না, শুধু এগুলোই অ্যাটেন্ড করতে হবে। আর, সব বড় শহরে রেলী করার জন্য আলাদা রাস্তা করে দিতে হবে! চ্যানেলের জন্মদিনের যাবতীয় আয়োজন চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠান আর আয়োজনেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয় কি?

আরও যে বিষয়টা আদিখ্যেতাটাকে চুড়ান্ত রুপ দিয়েছে সেটা হল, “জন্মদিনে” প্রধানমন্ত্রী আর রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা। দেশের একটা স্যাটেলাইট চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চস্তর থেকে শুভেচ্ছা জানতে হবে? আমাদের দেশটা ছোট, হয়ত একটা স্যাটেলাইট চ্যানেল আমাদের জন্য বিরাট ব্যাপার, আমাদের আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ত খুবই কম কিন্তু দেশের রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রীর সন্মান কিন্তু কম না। রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রী যে দেশেরই হোন না কেন পদের দিক থেকে তাঁদের মর্যাদা কিন্তু সমান। এই দুইজন ব্যক্তি এরকম একটা তুচ্ছ ব্যাপারে না জড়ালে কি চলত না? দেশের সব চ্যানেলের প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেখি রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রীর শুভেচছা! তাহলেতো একটু আগবাড়িয়ে সামুতে আমার বর্ষপূর্তি বা ১ লাখ হিট পূর্তিতে রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছাবার্তা আমিও আশা করতে পারি নাকি!!! দেশের সরকার আর রাষ্ট্রপ্রধান এতটাই সহজলভ্য? নাকি কৌশিকদার কথাই ঠিক! আমার চিন্তাভাবনাই সাইকিক। তাই যেন হয়!!!
|
This entry was posted on 10:52 AM and is filed under . You can follow any responses to this entry through the RSS 2.0 feed. You can leave a response, or trackback from your own site.

0 comments: